.

মিয়ানমার মাদ্রাসায় অগ্নিকাণ্ডে ১৩ এতিম শিশুর মৃত্যু: পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মুসলিম অধিবাসীদের মতে।

মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে গতকাল ভোরে একটি মাদরাসায় রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে ১৩ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত শিশুদের সবাই এতিম ছিল বলে জানা গেছে। ঘটনাটি এমন সময় ঘটল, যখন ঠিক ওই অঞ্চলটিতেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নিধনযজ্ঞ চলাচ্ছে বৌদ্ধ মৌলবাদীরা। গত ২০ মার্চ থেকে ইয়াঙ্গুন রাজ্যে ফের মুসলিম নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম। দেশটির কর্মকর্তারা জানান, গতকাল ভোররাত পৌনে তিনটার দিকে বোতাতং জেলার একটি মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসায় আগুন লাগে। এতে ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে ১৩ ছেলেশিশু মারা যায়। তবে ওই এলাকার মুসলিম অধিবাসীরা বলছেন, তাদের বিশ্বাস, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং তদন্ত কমিটিতে মুসলিম নেতাদের রাখারও কথা বলেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নতুন করে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার পর থেকে বৌদ্ধ মৌলবাদীদের হামলার আশঙ্কায় ওই মাদরাসার দরজা তালাবদ্ধ ও জানালা বন্ধ ছিল। ঘটনাস্থলে থাকা নোয়াং থেইন নামের এক ব্যক্তি জানান, নিহত শিশুদের বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছর। মাদরাসার জানালায় লোহার শিক থাকায় শিশুরা বের হতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে দাঙ্গা পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে। দুর্ঘটনার সময় মাদরাসাটিতে ৭০টি শিশু ঘুমাচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্য শিশুদের উদ্ধার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মিন্ত অং বলেন, আমরা সকালে আগুন নিভিয়েছি। তবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনও জানি না। এ নিয়ে অনেক গুজব শোনা যাচ্ছে। গতকালই জানাজা শেষে হতভাগ্য শিশুদের ইয়াঙ্গুনে দাফন করা হয়। এ সময় শিশুদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ থেকে ইয়াঙ্গুনে নতুন করে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। বৌদ্ধরা ছুরি ও লাঠি নিয়ে মুসলমানদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। মৌলবাদী বৌদ্ধদের আক্রমণ থেকে জীবন বাঁচাতে মুসলিমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গত শুক্রবার জাতিসংঘের মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টার টমাস ওজিয়া কুইনটানা বলেছেন, মুসলিমবিরোধী সংহিসতায় রাষ্ট্র জড়িত। তবে মিয়ানমার সরকার ওই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। এর আগে গত বছরের জুনে মিয়ানমারের আরাকানে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসেবে বলা হয়, এতে অন্তত ১৮০ জন নিহত এবং ১ লাখ ১০ হাজার লোক উদ্বাস্তু হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে—এ ধরনের সংগঠন বলেছে, হতাহতের সংখ্যা এর কয়েক গুণ।
মিয়ানমারের ৬ কোটি লোকের মধ্যে ৪-৫ শতাংশ মুসলিম। তবে শতাব্দীর পর শতাব্দী তারা সেখানে বাস করলেও মিয়ানমার সরকার তাদের সেদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিমরা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সূত্র : ওয়েবসাইট

0 Response to "মিয়ানমার মাদ্রাসায় অগ্নিকাণ্ডে ১৩ এতিম শিশুর মৃত্যু: পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মুসলিম অধিবাসীদের মতে।"

Post a Comment