.

খালেদার সতর্কবাণীতে আতঙ্কে ফাঁকিবাজ ও চাপাবাজ নেতারা

ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা না রাখায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া। রাজপথে কোনো অবদান না রাখার কারণে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ব্যর্থ আন্দোলনের ফল ভোগ করতে হবে বলে দলের নেতাদের সাবধান করে দিয়েছেন তিনি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ফাঁকিবাজ নেতারা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের দাবিতে অনেক দিন আগে থেকেই কঠোর কর্মসূচি এবং রাজপথে নেমে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারপতনের ডাক দিয়ে আসছিলেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। কিন্তু সরকারের ধরপাকড় অভিযানের সময় দলটির শীর্ষ পাঁচ নেতা গ্রেফতার এবং দেশজুড়ে বিরোধী দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী আটক হওয়ার পর থেকে বিএনপির বাকি নেতাদের মাঠে আর দেখা যায়নি। এমনকি গ্রেফতার আতঙ্ক এড়াতে নিজেদের কার্যালয়ে আসা তো দূরের কথা, জনসম্মুখেও দেখা যায়নি তাদেরকে।

এরপর গত ৫ জানুয়ারি মহাজোটের সর্বদলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন দেশজুড়ে ১৮ দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে সারা দেশে সক্রিয় থাকলেও রাজধানীর রাজপথে ছিলেন না বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মী। আর নির্বাচনের পর ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো চিত্রটি পরিবর্তন হয়নি।

বেশ কিছুদিন ধরে দলনেতা খালেদা জিয়া নিয়মিত বিএনপি’র গুলশানের কার্যালয়ে আসলেও দলটির অধিকাংশ নেতাই এখনো গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে সেখানে আসছেন না। এ নিয়ে দেশজুড়ে তাদের তীব্র সমালোচনাও পাল্টাতে পারেনি দৃশ্যপট।

দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, রাজধানীতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ব্যর্থতার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের দায়ী করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। শুধু তাই নয়, কোনোরকম নির্দেশ ছাড়াই দলের সব নেতারা আত্মগোপনে চলে গিয়ে দলনেতার নির্দেশ অমান্য করায় এই নেতাদের প্রতি নিজের অসন্তুষ্টির কথাও বারবার বলেছেন খালেদা।

দলের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, দলের একজন যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রামের সাবেক সাংসদ খালেদা জিয়াকে ফোন করলে তাতেও সাড়া দেননি তিনি। একইভাবে কয়েকদিন আগে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যও ফোন করেছিলেন দলনেতাকে। এই সদস্য সম্প্রতি তরুণ নেতা হিসেবে দলটির সামনের সারিতে এগিয়ে বেশ পরিচিতিও লাভ করলেও খালেদা জিয়াকে ফোন করার পরে উপেক্ষিত হয়েছেন তিনিও।

এই প্রসঙ্গে উপেক্ষিত সেই যুগ্ম মহাসচিব নিজের দায় অস্বীকার করে বলেছেন, “রাজধানীতে আন্দোলন পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল মহানগর বিএনপি। আর মহানগর বিএনপি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি বলেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে।”

তিনি আরো জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা পুরো ঢাকাকে পৃথক আটটি ইউনিটে ভাগ করার জন্য রাজি করিয়েছিলেন দলনেতাকে। এই আটটি ইউনিটের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল পৃথক আট নেতাকে। কথা ছিল, এই আট নেতা নিজ নিজ জায়গায় আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।

এই প্রসঙ্গে বিএনপি’র এই নেতার মন্তব্য হলো- “সাদেক হোসেন খোকা চালাকি করে নিজের দায়িত্ব অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়েছিলেন।”

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, এই নেতা কিছুদিন আগে আবারও ফোন করলে বিএনপি দলনেতা মুখের ওপরেই তাকে ‘নিষ্কর্মা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। উত্তরে নেতাটি বলেছিলেন, “আমরা রাজধানীর কোনো নেতা নই। তাছাড়া রাজধানীতে সমন্বিত আন্দোলনের কোনো দায়িত্বও আমাদের দেয়া হয়নি।”

এ সময় তিনি শহরের পৃথক পৃথক ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরকেও আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, “এই নেতারা হরতাল ও অবরোধের সময় আমাদের সঙ্গে ছিল না, আমাদেরকে তারা কোনোরকম সাহায্যও করেনি।”

গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য ক্রমাগত বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দিয়ে গেলেও দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার আতংক এবং আত্মগোপনের কারণে বরাবরই তা ব্যর্থ হয়েছে। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে সারা দেশ থেকে রাজধানী ঢাকা পৃথক হয়ে গেলেও শহরটিতে কোনো শক্ত আন্দোলন চোখে পড়েনি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া রাজধানীর আন্দোলনের সঙ্গে নেতাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকায় ব্যর্থ হয়েছে সমস্ত প্রচেষ্টা।

খালেদা জিয়ার এই কঠোর মনোভাব জানতে পেরে দলের ফাঁকিবাজ নেতারা আতঙ্কে পড়ে গেছেন। আতঙ্কে আছেন দলের ‘চাপাবাজ’ নেতারাও। এই ‘চাপাবাজ’ নেতাদের শুধু দেখা যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে। কোনো আন্দোলনেই তাদেরকে মাঠে দেখা যায়নি। দল পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপি’র সুপ্রিমো যে চিন্তাভাবনা করছেন তাতে এরা ছিটকে পড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দলের কমিটি নিয়ে যেসব নেতারা চাঁদাবাজি করেছেন তার খবরও খালেদা জিয়ার কাছে আছে। সেসব নেতারাও দল থেকে ছিটকে পড়তে পারেন।

0 Response to "খালেদার সতর্কবাণীতে আতঙ্কে ফাঁকিবাজ ও চাপাবাজ নেতারা"

Post a Comment