প্রাণ দিয়ে ছিনতাইকারীকে আটক করলেন সাহসী কনস্টেবল
চিৎকার শুনেই কর্তব্যের টানে ছুটে গেলেন তিনি। ধরে ফেললেন ছিনতাইকারীকে। ছিনতাইকারী তার বুকে ছুরির আঘাত করল। তবু ছিনতাইকারীকে ছাড়লেন না তিনি। সঙ্গীরা এসে ছিনতাইকারীকে ধরলেন।
কিন্তু বাঁচানো গেল না সাহসী পারভেজকে (২৫)। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এভাবেই জীবন উৎসর্গ করলেন কনস্টেবল পারভেজ। কক্সবাজার শহরের জাম্মু মোড়ের পাশে বাস পার্কিং এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক জাকির হোসেন রেস্তোঁরায় নাস্তা করে বের হলে ছয়জন যুবক সেখানে হাজির হয়। তারা জাকিরকে চ্যালেঞ্জ করে যে তার কাছে অবৈধ মালপত্র আছে। এতে প্রতিবাদ করেন জাকির। তখন জাকিরকে আটকে মুখ চেপে ধরে ওই যুবকেরা। জাকিরের সাড়ে ৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে সটকে পড়তে চেষ্টা করে তারা। এ সময় চিৎকার করে ওঠেন জাকির।
একটু দূরেই ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি জহিরুল ইসলাম। তখনো নির্ধারিত ডিউটির সময় হয়নি তাদের। নিরস্ত্র, সাদা পোশাকেই এগিয়ে যান দুজন কনস্টেবল নিয়ে। ধাওয়া করেন ছিনতাইকারীদের। এএসপি নিজেই আব্দুল মালেক নামের এক ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরেন। আরেক ছিনতাইকারী আবু তাহেরকে ধরে ফেলেন কনস্টেবল মো. পারভেজ। উভয়ই পরস্পরকে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারী তাহের প্যান্টের ভেতর থেকে ছুরি বের করে সজোরে আঘাত করে পারভেজের বুকে। তবু কনস্টেবল পারভেজ ছাড়েননি ওই ছিনতাইকারীকে। সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের জন্য সঙ্গীরা এগিয়ে এলেন। তাহেরকে গ্রেফতার করলেন। আহত পারভেজকে দ্রুত কক্সবাজার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডাক্তাররা লড়লেন, কিন্ত তাকে বাঁচানো গেল না।
পারভেজ জীবন দিয়ে রেখে গেলেন দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের অন্তহীন প্রেরণা। তার এই বীরোচিত মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। তিনি বলেন, পুলিশ সব সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের জীবন এবং সম্পদ রক্ষার গুরুদায়িত্ব পালন করে। পারভেজের মৃত্যু তাদের কর্তব্যবোধকে আরো বেশি উজ্জীবিত করবে। দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি কক্সবাজার জেলার এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আইজিপি পারভেজের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।