নতুন বছরে অটনোমাস ড্রোন উপহার দিলেন কুয়েটের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন
খান দীপ। এখনও বিমানে চড়া না হলেও নিজের তৈরি ‘বাংলার ড্রোন-কুয়েট’-এ চেপেই
স্বপ্নকে বাস্তবে মেলে ধরেছেন তিনি। একেবারেই ব্যক্তি উদ্যোগে কল্পনার
পরীকে বশে এনেছেন এই তরুণ উদ্ভাবক। এবার ইচ্ছে নিজের তৈরি বিমানে
পরিভ্রমণের, যা চলবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে। নিভৃতচারী এই তরুণের ড্রোন তৈরির
আদ্যোপান্ত এবং আগামীর স্বপ্ন কথা রোমাঞ্চিত করে নতুন প্রজন্মের। অমানিশায়
জ্বালে আশার আলো।
শৈশবের মানসপটে
মাথার ওপর দিয়ে শোঁ- শোঁ করে উড়ে চলা যন্ত্রটার নাম তখনও জানা হয়নি। প্রতিদিন মধ্যদুপুরে বিকট শব্দ করে ছুটে চলতো। আর শব্দ শুনে কেজি ওয়ান পড়ুয়া দীপ ছুটে যেতো ছাদে। অদৃশ্য হবার আগ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকতো অপলোক। সেই থেকেই দীপের মানসপটে অবিষ্কারের নেশা। শৈশব থেকেই ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির ওপর ছিলো দারুণ ঝোঁক। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কলকাতা থেকে প্রাথমিক পাঠ অনুশীলনের সময়ই একদিন দীপকে ‘বিজ্ঞান যখন ভাবায়’ নামের একটি বই কিনে দেন তার মেজ মামা খুরশীদ আলম। এসময় বইটি তার কাছে পাঠ্য বইয়ের চেয়েও প্রিয় হয়ে ওঠে। দীপের কথায়, এই বই পড়েই সে ইলেক্ট্রনিক্স কাজের বেসিক জ্ঞান অর্জন করেছে। সেই জ্ঞানের অনুশীলন আর নিত্য গবেষণার মাধ্যমেই তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ড্রোন। ড্রোনটির নাম দিয়েছেন- ‘বাংলার ড্রোন-কুয়েট’।

রোবট থেকে ‘বাংলার ড্রোন-কুয়েট’
ড্রোন মিশনের গোড়ার কথা বলতে গিয়ে দীপ বললেন, ‘২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ঢাকার গুলিস্তানের হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রোবটিক কম্পিটিশন। আন্ত:বিশ্বদ্যালয় পর্যায়ের জাতীয় এই প্রতিযোগিায় আমি আর আমার বন্ধু জিএম সুলতান মাহমুদ রানা দু’জনে ‘অটোনোমাসা মেজ সলভার রোবট’ নিয়ে অংশ গ্রহণ করি। মোট ৩২টি দলের মধ্যে আমাদের শাখায় ২৬টি দলের মধ্যে আমাদের রোবটটি দ্বিতীয় হয়। তারপর আগ্রহ আও বেড়ে যায়।’
রোবটে সফলতার পর বিমান এবং এরপর ড্রোন তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন খান দীপ। কিন্তু এ সময় দেখা দেয় আর্থিক সঙ্কট। কেননা পুরো কাজটি করতেই প্রয়োজন ছিলো মোটা অংকের অর্থ। এসময় এগিয়ে আসেন দীপের মেজ মামা খুরশীদ আলম। তখন তিনি ওকে ৪০ হাজার টাকা দেন ড্রোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে। এরপর পড়ালেখার পাশাপাশি এক মনে এগিয়ে চলা। ড্রোন তৈরির পাশাপাশী এর ফাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইউবি-তে অনুষ্ঠিত আইসিআইইভি এবং আইসিএইই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে দীপের। এগুলো আইইই এক্সপ্লোর নামক ডিজিটাল লাইব্রেরিতে জায়গা পেয়েছে বলে জানালেন তিনি।
দীপ আরও জানালেন, কুয়েটে স্নাতক করার সময় ড্রোনটি তৈরি করতে সময় লেগেছিলো টানা এক বছর এক মাস। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ’ইন্টারন্যাশনাল রোবট গট ট্যালেন্ট’ প্রতিযোগিতায় গিয়ে ড্রোন তৈরিতে উৎসাহিত হন দীপ। প্রতিযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তরিৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশলী বিভাগের ছাত্র কাওছার জাহানের কোয়াডকপ্টার দেখে সাত মাস আগে শুরু করা গবেষণার পালে বাতাস লাগে। এরপর, কেবলই পাখা মেলে উড়াল দেয়ার গল্প।
গল্পটা বলতে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন খান দীপ বললেন, ’তখন আমি চতুথ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে পড়ি। আমার থিসিস সুপার ভাইজার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শাহজাহানের পরামর্শে একটি কপ্টার তৈরিতে মনোনিবেশ করি। এরপর যখন চারদিকে পাইলট বিহিন বিমান নিয়ে নানা খবর প্রকাশ পায়, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখি একটি ড্রোন বানানোর। আমি চেয়েছি, ড্রোনটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বোভৌত্ত অক্ষুণœ রাখা এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় নজরদারির কাজ করবে। একই সাথে জরুরী প্রয়োজনে ঔষধ পরিবহন, দুর্গত এলাকায় মানবিক সহায়তায় ব্যবহৃত হবে।’
একটু থেমে দীপ জানালেন, ’এই কাজে শুরুতে আমার বন্ধু রিজভী আহমেদ কপ্টারের ফ্রেম তৈরির প্রয়োজনীয় ক্যালকুলেশনে সাহায্য করে। এছাড়াও কোন ধরনের ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফ্রেম তৈরি করা উচিত হবে, সে বিষয়েও পরমার্শ দিয়েছে। ফাইনাল ফ্রেমটি তার সাথে বসেই অ্যাসেম্বেল করেছি। এছড়াও ওই সময় ব্রাসলেস ডিসি মটর নিয়ে কাজ করার সময় বন্ধু জিএম সুলতান মাহমুদ রানার সাহয্যের কথাও বলতে চাই।’
স্মৃতি হাতড়ে দীপ আরও বললেন, ’এভাবেই নিরন্তর গবেষণার পর প্রথম কপ্টারটি আকাশে ওড়ানোর সময়ই সেটি ভূপতিত হয়। প্রথমে আমিও ধপাস করে বসে পড়ি। মনটা দারুণ বিষণ্ণতায় পেয়ে বসে। কিন্তু আমি আমার স্বপ্নে অনঢ় ছিলাম। বিষয়টি একদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকা প্রবাসী সিনিয়রদেও সাথে আলাপ করি। এসময় ইমন ভাই, আজাদ ভাই ও রায়হান ভাই আমাকে কিছু কমপোনেন্ট দিয়ে সহায়তা করেন। আমি আবার নতুন করে ড্রোন তৈরির কাজে মনোনিবেশ করি। টানা সাড়ে তিন মাস কাজ করার পর অবশেষে গত বছরের ১০ জুলাই রিমোট দিয়ে ড্রোনটি উড়াতে সক্ষম হই। এরপর বিষয়টি আমার থিসিস সুপার ভাইজার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শাহজাহান স্যারকে দেখাই। তিনি ড্রোনটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমাকে আরও এগিয়ে যাবার পরামর্শ দেন। তার আশীর্বাদে বর্তমানে আমার ড্রোনটি গুগল আর্থ এর ম্যাপ থেকে আগে থেকেই নির্ধারিত পজিশনে উড়তে পারে। পরিভ্রমণ শেষে এটি আবার ফিরে আসে। স্বয়ক্রিয় ভাবেই রিমোট ছাড়া। নজর রাখতে পারে ৩৫০ ফুট ওপর থেকে।’
ড্রোন তৈরি করতে সি++ প্রোগ্রামিং আর আর্ডিনো প্রসেসরের সাহায্য নিয়েছেন দীপ। দীপের তৈরি বর্গাকৃতির (২ বাই ২ ফুট) এই ড্রোনটিতে রয়েছে চারটি প্রপেলার। এর ভারকেন্দ্র বরাবর বসানো হয়েছে ইনারশিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (আইএমআই) বোর্ড। এখান থেকে প্রয়োজনীয় ডাটা সংগ্রহ করে প্রসেসর এর মাধ্যমে মটোরের গতি নিয়ন্ত্রণ করে পুরো কপ্টারটিরকে নিয়ন্ত্রণ এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়ার কাজটি করা হয়। কপ্টারটির ওজন ১৮০০ গ্রাম। এটি দেড় কেজি ওজনের যে কোনো কিছু নিয়ে উড়তে সক্ষম। তবে যদি কেউ এর চেয়ে ওজনের বস্তু বহন করতে চায় তাহলে এর মটর আর প্রপ্রেলর চেঞ্জ করলেই চলবে বলে জানালেন দীপ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রোনটি পরিচালনের জন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে জিপিএস ও ম্যাগনোটো মিটার। সংযুক্ত আছে ওয়্যারলেস টান্সিভার। উড়ন্ত অবস্থায় এর মাধ্যমে ড্রোনের ব্যাটারি ভোল্টেজ, অবস্থান, উচ্চতা এবং আবহাওয়া মনিটর করা যায়। একই সাথে এই ড্রোন থেকে লাইভ ভিডিও পাঠানো যাবে যা কম্পিউটাওে স্বয়ক্রিয় ভাবে স্টোর হয়।
প্রসঙ্গক্রমে দীপ বললেন, সুন্দরবনে জলদস্যুরা বিভিন্ন সময় আমাদের জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। এই ড্রোন দিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী সুন্দরবনে নজরদারি আরও বাড়াতে পারবেন। ডাটা ট্রান্সিভার সিস্টেম থাকায় ড্রোনটি যে জায়গায় যাবে সে জায়গার আবহাওয়া সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য যেমন তাপমাত্রা, চাপ এটি দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব।
অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি
এ বিষয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শাহজাহান জানান, ’গত বছরেই বাংলাদেশে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কোয়াডকপ্টার পরিচলনা করে দীপ। কোয়াডকাপ্টার মূলত এটি এমন একটি উড়ন্ত যান যেটি কন্ট্রোল করা হয় চারদিকে চারটি ব্রাশলেস ডিসি মটর এবং প্রোপেলার দিয়ে। এটি নরমাল উড়জাহাজ এর মাতো রোল, পিচ এবং ইও (yaw) এই তিন অক্ষ বরাবর চলতে পারে। চারটি মোটরের স্পিড পরিবর্তন করে এটিকে এই তিন অক্ষ বরাবর ঘুরানো যায়। আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় যেকোনো একটি পয়েন্টে ভেসে থাকতে পারে। একে হোভারিং অবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় চারটি মোটরের স্পিড পুরোপুরি সমান থাকে এবং পুরো ক্রাফটটি ভূমির সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।
তিনি আরও বললেন, গতবছরের শেষ দিকে, স্নাতক পরীক্ষার পর সে দেশের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এনে কোয়াডকপ্টারটিকে সফল ড্রোনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেষ্টার করে। ইতিমধ্যেই এটি ৯০ শতাংশের বেশি সফলতা পেয়েছে। পরিপূর্ণ ড্রোন হতে হলে ওকে এখন এটিতে ’ইমেজ প্রসেসিং কার্ড’ ব্যবহার করতে হবে, যা বেশ ব্যয় সাপেক্ষ এবং এটা সিভিল উজের জন্য সচারচর বিক্রি করা হয় না। তাই বাণিজ্যিকভাবে না হলেও দীপের চারটি ফ্যান দিয়ে কপ্টারটিকে আমরা নির্দ্বিধায় মিনিয়েচার ড্রোন বলতে পারি।’
দীপের স্বয়ংক্রিয় বিমান মিশন
কলেজ বন্ধু যশোরের রিজভী আহমদের অটোনমাস প্লেন বানানোর জন্য চেষ্টা করছে দীপ। সে জানায়, রিজভী এখন অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ইন্ডিয়ায় চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। বছরে দুইবার ও দেশে আসে এবং এক মাসের জন্য এখানে অবস্থান করে। এসময় আমরা দু’জনে এক সাথে কাজ করে আমাদের পরবর্তী স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আপাতত বিমানটি আমরা রিমোট দিয়ে ওড়াতে সক্ষম হয়েছি।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: আপাতত ইউএসএ-তে প্রাডু ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকত্তর করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে যদি অ্যারোনটিক্যাল বা ড্রোন নিয়ে কোনো রিসার্চ সেন্টার হয় তাহলে এখানে থেকেই গবেষণা কাজ চালিয়ে নিতে চান দীপ। আর এই মুহূর্তে তিনি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন দিয়ে ড্রোন চালানোর কাজ করছেন। চলতি মাসেই এ কাজে সফলতায় আশাবাদী দীপ।
আর এই মুহূর্তে কুয়েটের জুনিয়র ছোট ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এর সাথে ভিডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেমটি ডেভেলপ করছেন দীপ। তিনি জানালেন, এই ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো দূরত্বে পাঠনো সম্ভব। এছাড়াও ভিডিও ডাটা এনক্রিপটেড থাকায় এই ভিডিও কেউ চুরি করে দেখতে পারবে না। যেটা বাজারের নরমাল ভিডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেম দিয়ে সম্ভব।
দীপের দীপ-শিখা
১৯৯১ সালের ২৭ জুলাই, রংপুর জেলার পাল পাড়া নানু বাড়িতে জন্ম হয় দীপের। দীপের বাবা মোহাম্মাদ দৌলত খান বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি ফার্মে সিভিল ইঞ্জিনিয়র হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি তিস্তা ব্যারেজ ও যমুনা ব্রিজ তৈরির সময় প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। আর মা নূর জাহান খান গৃহিণী। বর্তমানে এক বোন আরা বাবা-মায়ের সাথে ঢাকার খিলগাঁওয়ে বসবাস করছেন। দীপের দাদা বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার উত্তর হাজতিয়া গ্রামে। কুমিল্লার খাঁ বাড়ির এই ছেলেটি সাত বছর পর্যন্ত কাটিয়েছে রংপুরে। সেখানে রংপুরে শিশু নিকেতন দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। ঢাকায় এসে খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে জিপিএ-৫ এবং কলেজ অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (কোডা) থেকে এ+ পেয়ে এইচএসসি উত্তীণ হন। কিন্তু বুয়েটে চান্স পেয়েও পছন্দের বিষয় না পওয়ায় ২০০৯ সালে কুয়েটে তরিৎ ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগে ভর্তী হন। গতবছর অক্টোবরে স্নাতক শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন। এর পর ডিসেম্বরে দীপ জার্মানির সাইনপালস কোম্পানিতে ড্রোন সিস্টেম ডেভেলপার হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু গবেষণা আর উদ্ভাবনের নেশার কারণে মানিয়ে নিতে না পেরে মাঝ পথেই সেখান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। নামের ওপর সুবিচার করে জোনাকির মতো আলো ছড়াতে মন দিয়েছেন নিরন্তর গবেষণায়।
0 Response to "আকাশে উড়ছে কুয়েট ছাত্র দীপের তৈরি স্বয়ংক্রিয় ড্রোন!"
Post a Comment