পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশগুলো
নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) নিয়ে প্রতিনিয়ত
গবেষণা করে চলেছে। শুধু নিরাপত্তা ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে নয়, ড্রোন এখন
ব্যবহৃত হচ্ছে আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণসহ নানা গবেষণাকাজে। প্রযুক্তি দুনিয়ার
গুরুত্বপূর্ণ এই ‘ড্রোন’ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা শেষে বাংলাদেশেই তা তৈরি হতে
যাচ্ছে। এ কাজে হাত দিয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) তরুণ গবেষকদের দল ‘সাস্ট রোবটিকস এরোনোটিকস
অ্যান্ড ইন্টারফেসিং রিসার্চ গ্রুপ’-এর (সাস্ট রোবএরো) সদস্যরা। তাঁদের
দাবি, এ বছরের এপ্রিলের মধ্যেই শাবিপ্রবির আকাশে উড়বে তাঁদের তৈরি ‘ড্রোন’।
সাস্ট
রোবএরো দলের প্রধান ও শাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী
সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ড্রোনের ওপরের কাঠামো তৈরির
কাজ শেষ হয়েছে বছরের প্রথম দিন। এখন ইঞ্জিনসহ ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি
সংযোগের কাজ চলছে।’ গত বছরের এপ্রিল থেকে এ প্রকল্পের তাত্ত্বিক কাজ শুরু
করে সাস্ট রোবএরো। দীর্ঘ গবেষণা শেষে এবার ড্রোন বানানোর কাজে হাত দিয়েছে
তারা। তবে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য দলের বেশির ভাগ সদস্যই
ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
নাবিল বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ চলছে ইন্টারনেট আর মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে।’
নাবিল
ছাড়াও এ কাজের অগ্রভাগে আছেন একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রবি
কর্মকার ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন রাহাত। আর ড্রোন তৈরি
দলের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড
ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
ড্রোনের
বৈশিষ্ট্য হলো, এটি মানুষের সাহায্য ছাড়া পরিচালিত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে
তথ্য এবং ছবি সংগ্রহ করে নির্ধারিত সার্ভারে পাঠাতে পারে। এ ছাড়া আকাশে
গুপ্তচরবৃত্তি চালানো, নিজ দেশের আকাশসীমা পাহারা দেওয়া, আবহাওয়া
পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের বেতার ও রাডার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো, আড়ি পাতা থেকে
শুরু করে নানাবিধ কাজে ভূমিকা রাখতে পারে এ ড্রোন। চালক না থাকার কারণে
ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও এ ধরনের বিমান ব্যবহার করা যায়।
এ
প্রকল্প সফল হলে তা দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হবে বলে মনে করেন
নাবিল। তিনি বলেন, ড্রোন তৈরি করা গেলে তা দেশের নিরাপত্তাকাজে ব্যবহার করা
যাবে। দেশের সীমান্তগুলোতে নজরদারি ছাড়াও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় এটি কাজে
লাগবে। র্যাব বা পুলিশের হাতে এ প্রযুক্তি দিলে তাদের টহল কার্যক্রম অনেক
সহজ হয়ে যাবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী এটিকে কাজে লাগিয়ে
দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে পারবে। রেলের নাশকতা ঠেকাতেও
ড্রোন কাজে লাগানো যাবে বলে তিনি জানান।
প্রাথমিকভাবে তিন ফুট
লম্বা ও চার ফুট চওড়া একটি ড্রোন তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান নাবিল। দেশের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ গবেষণাকাজে স্পন্সরদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি
বলেন, ‘এ ধরনের গবেষণা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আমরা আপাতত নিজেদের অর্থায়নে কাজ
শুরু করেছি। কিন্তু এ গবেষণাকাজ স্পন্সর ছাড়া কোনোভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব
নয়।’
শাবিপ্রবির তরুণ উদ্ভাবকদের তৈরি সম্ভাব্য ড্রোনের প্রথম
সংস্করণ দেখতে অনেকটা বি-৫২ জঙ্গিবিমানের মতো হবে। পরে ধাপে ধাপে এর
বিভিন্ন ডিজাইন ও সংস্করণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সাস্ট রোবএরোর সদস্যরা।
ড্রোনের
মতো উচ্চ প্রযুক্তির গবেষণায় হাত দেওয়ার আগে সাস্ট রোবএরোর আরো অনেক
উদ্ভাবন রয়েছে। এর মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড ডিটেক্টর, এসএমএস বেইজড
কন্ট্রোলিং সিস্টেম, ট্র্যাকিং ডিভাইস, শেডো ফাংশন রোবট, হার্টবিট সেন্সর,
ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার, ডিজিটাল ব্রেইল রিডার, অবসট্যাকল ডিটেকশন
ফর ব্লাইন্ড পিপল অন্যতম।
0 Response to "ড্রোন উড়বে দেশেই"
Post a Comment