প্রধান বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের সুযোগে পাবনায় ভোটের লড়াইয়ে মূল
প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ বনাম সাবেক আওয়ামী লীগ। পাবনা-১
(বেড়া-সাঁথিয়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। তাঁর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন
আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (তালা প্রতীক)।
দুজনেই জয়ী হওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। শামসুল হক টুকু কালের কণ্ঠকে
বলেছেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর দল নেই, শিকড় নেই, অস্তিত্ব নেই।’ অন্যদিকে
আবু সাইয়িদ বলেন, ‘নৌকা প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।’
নির্বাচনী
আমেজ জমজমাট না হলেও মৃদু শৈত্যপ্রবাহের ভেতর আওয়ামী লীগের বর্তমান ও
সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রীর ভোটযুদ্ধের দিকে নজর আছে সবারই। এদিকে সাঁথিয়া
উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সামান্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার রাতে সন্ত্রাসীরা একটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। তবে
এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী দ্রুত
ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
প্রসঙ্গত,
পাবনা-৩ (চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা) আসনে চাটমোহর একসময়
চরমপন্থী অধ্যুষিত অঞ্চল থাকায় সেখানে প্রশাসনের রয়েছে বিশেষ নজর। জেলার
পাঁচটি আসনের মধ্যে এরই মধ্যে পাবনা-২, ৪ ও ৫ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এসব আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী টুকু তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী
অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো দল
নেই, শিকড় নেই, অস্তিত্ব নেই। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে এবং
এতে নৌকার বিজয় হবে শতভাগ। গতকাল শনিবার বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখায় নিজ
বাসায় কালের কণ্ঠর প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, উন্নয়নের
ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ভোটাররা মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকায়
স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন।
প্রধান বিরোধী দল ভোট বর্জন করায়
নির্বাচন আদৌ গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে টুকু বলেন,
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতেই এ
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিরোধী দল নাশকতার সৃষ্টি করতে পারে। তবে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। কোনো রকম
সন্ত্রাস বরদাশত করা হবে না। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও সব মহলের কাছে
গ্রহণযোগ্য হবে।
ভোটাররা এবারও বিগত নির্বাচনের ধারাবাহিকতা
রক্ষা করবেন উল্লেখ করে টুকু আরো বলেন, ২০০৮ সালে ভোটাররা নৌকা প্রতীককে
বিজয়ী করে সুফল পেয়েছেন। সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি
ঘটানো হয়েছে। ব্যাপক হারে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তাঘাট,
স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও মসজিদ-মন্দির। পুরো এলাকাকে বিদ্যুতের আওতাভুক্ত করা
হয়েছে। অন্যান্য উন্নয়নের কাজও হয়েছে ব্যাপক।
সাবেক আওয়ামী লীগ
নেতা আবু সাইয়িদ অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ
করেছেন। বেড়া পৌর এলাকার কাগমাইর পাড়ার বাসায় কালের কণ্ঠর সঙ্গে আলাপকালে
তিনি অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ তালা মার্কার ভোটার ও সমর্থকদের ব্যাপক ভয়-ভীতি,
গ্রেপ্তার ও আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতেই সাঁথিয়ার ধোপাদহ
ইউনিয়নের হাঁপানিয়া ভোটকেন্দ্রের তালা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট
দুদু মিয়াকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিস্ফোরক আইনে। তিনি একজন কৃষিজীবী ও
নিরপরাধ রাজনৈতিক কর্মী। এ ধরনের গ্রেপ্তার-নির্যাতনের মধ্যে কোনো রকম
অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।’
এর পরও
সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ হলে নিজের জয়ের সম্ভাবনা কতখানি- এ প্রশ্নের জবাবে সাবেক
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সে ক্ষেত্রে তালা প্রতীকের জয় অবশ্যম্ভাবী। শুধু
তা-ই নয়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। কারণ নিকট অতীতে
তারা ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা
করেছে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তাদের সন্ত্রাস ও প্রতিহিংসার
শিকার হয়েছে। ভোটের মাধ্যমেই জনগণ এর জবাব দেবে।
অধ্যাপক আবু
সাইয়িদ আরো বলেন, সাধারণ মানুষ এসব সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের কবল থেকে মুক্তি
চায়। তারা পরিবর্তন চায়। একচেটিয়া শাসনের অবসান চায়।
একনজরে পাবনার ভোট
পাবনার
দুটি নির্বাচনী আসনের (পাবনা-১ ও ৩) ২৭৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টিকে
ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এসব এলাকায় নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ও
আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে থাকছে র্যাব, বিজিবি ও
সেনাবাহিনী। বেড়া-সাঁথিয়া আসনে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ওয়ার্কার্স
পার্টির নজরুল ইসলাম (হাতুড়ি) ও জেপির ইয়াসিন আরাফাত (সাইকেল)।
জেলা
নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দীন জানান, পাবনা-১ ও পাবনা-৩ আসনে
মোট ছয় লাখ ৯২ হাজার ৫৪৩ জন ভোটারের জন্য ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য
নির্বাচনী সামগ্রী সেখানে আগেই নির্বাচন কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, পাবনা-১ এলাকায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১১৮, বুথের সংখ্যা ৬৩৯।
পাবনা-৩ নির্বাচনী এলাকায় ভোটকেন্দ্র ১৬০টি আর বুথের সংখ্যা ৭২৭। নির্বাচন
পরিচালনা করবেন ২৭৮ জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং এক হাজার ৩৬৬ জন সহকারী
প্রিসাইডিং অফিসার।
0 Response to "আ. লীগের বর্তমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ভোটযুদ্ধ আজ"
Post a Comment