.

মঠবাড়িয়ায় বসে মানুষ কেনা-বেচার হাট!


মঠবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ মঠবাড়িয়ার মানুষ তখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। চারিদিক ঘন কুয়াশায় আছন্ন। পৌর শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলো তখনো ফাঁকা। এর মধ্যেই পৌর শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট মোড়ে কিছু মানুষের ভিড়। তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে আসা অভাবী মানুষ। প্রতিদিন ভোরে ট্রাফিক পয়েন্ট মোড়ে এসব শ্রমজীবী মানুষের হাট বসে। তারা সেখানে আসেন বিক্রি হতে। আবার আরেক শ্রেণীর মানুষ আসে এসব মানুষকে কিনতে। ভোর থেকে সকাল ৮-৯টা পর্যন্ত চলতে থাকে দর কষাকষি। একবার দাম বাড়ে আরেকবার কমে। এক পর্যায়ে তারা বিক্রি হয় সারা দিনের জন্য। এদের কেউ বলে শ্রমিক আবার কেউ বলে কামলা অথবা লেবার। এই মৌসুমে গ্রামে তেমন কাজ না থাকায় তারা কাজের সন্ধানে ভোররাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে ছুটে আসে শহরে। ৭০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শ্রমজীবী মানুষ এ হাটে বিক্রি হতে আসে। ধান কাটা, বিল্ডিংয়ের কাজ, মাটি কাটাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য এসব মানুষকে কিনে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব শ্রমজীবী মানুষের বেশির ভাগই আশ্রয়হীন, ছিন্নমূল ও অভাবী। মঠবাড়িয়া শহরে এসব দিন মজুর ও কৃষি শ্রমিকের বেশ অভাব। তাই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অভাবী মানুষগুলো এভাবে বিক্রি হয়ে পেটের ভাত জোগায়। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। সারা বছর কৃষকের ধান তে থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের সবজিতে ভরে থাকে। এসব ফসল তোলার কাজে শ্রম দিতে এসব মানুষ প্রতিদিন গ্রাম থেকে ছুটে আসে।

উপজেলার দণি মিঠাখালী গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে আসা মোঃ আঃ কালাম ও সবুজ নগর গ্রাম থেকে আসা লিটন খাঁ জানান, গ্রামে তেমন কোন কাজ নেই। তাই শহরে আসি কাজের সন্ধানে। গ্রামে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে পাওয়া যায় ১০০-১৫০ টাকা। তাছাড়া গ্রামের জমিতে কাজের জন্য গৃহস্থই যথেষ্ট। তারা সহজে জমিতে শ্রমিক নিতে চায় না। তাই শহরে আসি, শহরে সহজেই কাজ পাওয়া যায়। তবে শহরে হোক আর গ্রামে হোক, সারাদিন কাজ করে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। শ্রম বিক্রি করতে আসা অন্য মানুষ গুলো জানায়, শহরে সারা দিন কাজ করে পাওয়া যায় ২৫০ টাকা। এ দিয়ে কোনো রকম চলে তাদের সংসার। তবে ধান কাটা মৌসুমে এদেও কদর বেড়ে যায়। তখন ওদের শ্রম বিক্রি করতে শহরে আসতে হয় না, গৃহস্থরাই ছুটে যায় তাদের বাড়িতে।

0 Response to " মঠবাড়িয়ায় বসে মানুষ কেনা-বেচার হাট!"

Post a Comment