
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে দুই মন্ত্রীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে। শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার পরও ঘন ঘন লোডশেডিং ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ােভ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হককে উদ্দেশ্য করে বলেন, বর্তমান সরকারের চার বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। তার এ কথা শুনে কমিটির আরেক সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক রেগে যান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দুজনের মধ্যে এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। দুজন মন্ত্রীই এ কমিটির সদস্য। সংসদ ভবনে গত ২৭/০১/২০১৩ইং তারিখে অনুষ্ঠিত কমিটির ৪৪তম বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কুইক রেন্টালের নামে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও লোডশেডিং থেমে নেই। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শিল্প কারখানায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হককে উদ্দেশ করে বলেন, 'গত চার বছরে আপনার মন্ত্রণালয় দৃশ্যত এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারেনি।' তার এ কথা শুনে রেগে যান এনামুল হক। তিনি তার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার মতায় আসার পর প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এ কথার জবাবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাহলে এত ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে কেন? জনগণ এসব কথা শুনতে চায় না। তারা কাজ দেখতে চায়। এ সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব সময় ২০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আর বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। আগামী গ্রীষ্মে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে। এ কারণেই বিদ্যুৎ খাতে এখনো সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এ ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এসব সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি বলেই এ খাতে কোনো কাজ হয়নি। দুই মন্ত্রীর এ বাকবিতকঠন্ডায় সংসদীয় কমিটিতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরপর কমিটির সভাপতি দুই মন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'আপনারা এভাবে উত্তেজিত হয়ে কথা বলবেন না। ব্যক্তিগত আক্রোশের কথা না বলে বৈঠকের কার্যসূচি অনুযায়ী কথা বলুন।' সূত্র জানায়, দুই মন্ত্রীর বাকবিতকঠন্ডার শুরুর আগে কমিটির আরেক সদস্য ইসরাফিল আলম ােভ প্রকাশ করে বলেন, যান্ত্রিক ক্রটির কারণে বন্ধ সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় তিনবার তারিখ নির্ধারণ করেও ওই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত করতে পারেনি। এটি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দুই মন্ত্রীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মে. জে. (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'আমি ওই সময় তাদের দুজনকে বাকবিতকঠন্ডা না করে বৈঠকের কার্যসূচি অনুযায়ী কথা বলার আহ্বান জানাই।' বৈঠকে উপস্থিত কমিটির এক সদস্য জানান, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়ায় দুই মন্ত্রীর মধ্যে বাকবিতকঠন্ডার ঘটনা ঘটে। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন কমিটির সদস্য আবদুল মতিন খসরু। এ ছাড়া বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও আরইবির চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
0 Response to "বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে দুই মন্ত্রীর বাকবিতন্ডা"
Post a Comment