.

বানারীপাড়ায় ঐহিত্যবাহী ২১৮তম সূর্যমনির মেলার অনুমতির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া থেকেঃ বানারীপাড়ার ঐতিহ্যবাহী ২১৮তম সূর্য মনির মেলার অনুমতির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে শত শত নারী-পুরুষের অংশ গ্রহনে পৌর শহরে বিােভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে উপজেলা চত্বরে সূর্য পূজা কমিটির সভাপতি গাভা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক বাদল কৃষ্ণ সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন মেলা আয়োজক কমিটির সহ সভাপতি গোপাল চন্দ্র শীল,সদস্য দ্রুব কান্ত সাহা,জহর সাহা,চিত্তরঞ্জন দাস, মাষ্টার মতি লাল বড়াল,পূজা কমিটির সম্পাদক বাচ্চু গুহ,সদস্য জয়দেব শীল,ডাঃ সুখরঞ্জন রায়,দিলীপ শীল প্রমূখ। এসময় তারা আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাণের উৎসব মেলার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানান। পরে মেলার অনুমতির দাবীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

এদিকে মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে পূজারী সহ বানারীপাড়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাবাসীর মাঝে হতাশা ও তীব্র ােভের সঞ্চার হয়েছে। ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে প্রতিবছর এই সময় মাঘী সপ্তমী তিথির প্রথম প্রহরে সনাতন ধর্মালম্বীদের সূর্যোদয়ের পূজোর মধ্য দিয়ে উপজেলার বেতাল গ্রামে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সম্পাদক প্রয়াত খবির উদ্দিন মোল্লার বিশাল মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শুরুর দিকে ২০ মন ওজনের কষ্টি পাথরের সূর্যোদয়ের মূর্তি মেলার প্রধান আকর্ষন ছিল। পাকিস্তান আমলে ওই মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়।ওই সময় প্রায় ১০ একর জমি জুড়ে মেলা বসত।মেলায় এতো বেশী লোক সমাগম হত যে কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করা দুস্কর ছিল। কালের বিবর্তনে মেলা কিছুটা সংকুচিত হলেও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বিরাজমান রয়েছে।

সূর্য মনির মেলা এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মেলা।এ মেলার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে এতে শহুরে জীবনধারার কোন প্রভাব নেই। সোঁদা মাটির গন্ধ মেশানো খেঁটে খাওয়া মানুষ তেল জবজবে চুলে সিঁথি করে মেলায় আসে। তারা কুঁড়ে ঘরের আদলে গড়া দোকানগুলোতে ঘুরে বেড়িয়ে ধোঁয়া উঠা গরম তেলের কড়াইয়ে ভাজা জিলাপী খায়। রাতে যখন বাড়ি ফেরে তখন তাদের ঝোলায় থাকে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রিয়জনের জন্য কেনা লাল ফিতে,রেশমি চুড়ি,আলতা,স্নো,পাউডার কিংবা বাঁশের বাঁশি। প্রতি বছরের ন্যায় মেলাকে কেন্দ্র করে এবারও বানারীপাড়া ও এর পার্শ্ববর্তী উপজেলায় উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার মেলা শুরুর দিন ধার্য হওয়ায় মেলার স্থলে ছোটদের খেলনা,কসমেটিকস,ফার্নিচার,বাশঁ,বেঁত,কাঠ,মাটির তৈরী তৈজসপত্র,নানা লোভনীয় খাবার ও মিষ্টির দোকান সহ বিভিন্ন আইটেমের তিন শতাধিক স্টল নির্মিত হয়েছে।যাত্রা,পুতুল নাচ,নাগরদোলা ও সার্কাসের প্যান্ডেল নির্মান সহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

হঠাৎ করে মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় আয়োজক,পূজারী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ােভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার পরিবেশ শান্তিপূর্ন উল্লেখ করে স্থানীয় প্রশাসন ৩০ দিন ও জেলা পুলিশ সুপার ১৫ দিনের জন্য সুপারিশ করলেও এসএসসি পরীার সময় যাত্রা,পুতুল নাচ ও সার্কাসের অনুমতি না দেওয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনার নূরুল আমিন জেলা প্রশাসক শহীদুল আলমকে অনুরোধ জানান।ফলে আটকে যায় মেলার অনুমতির বিষয়টি। এদিকে মেলার অনুমতি না পাওয়ায় সূর্য পূজা না দেওয়ার ঘোষনা দেয় পূজা কমিটি। এর ফলে সনাতন(হিন্দু) ধর্মালম্বীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

ফলে পূজা না করে গতকাল সনাতন ধর্মালম্বীদের নেতৃত্বে যাত্রা ও সাকার্স সহ মেলার অনুমতির দাবীতে বিােভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।মেলা প্রেমীদের মতে দুই শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা অনুষ্ঠিত না হলে বাঙালী ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটবে। যা জনমনে ােভের সৃষ্টি করে বহিঃ প্রকাশ ঘটতে পারে।।এ প্রসঙ্গে মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর জাকির হোসেন মোল্লা, সূর্য পূজা কমিটির সভাপতি বাদল কৃষ্ণ সাহা,সম্পাদক বাচ্চু গুহ এবং পূজারী কৃষ্ণ কান্ত ভট্টাচার্য ঐতিহ্যের ধারাহিকতা বজায় রাখতে মেলার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।

0 Response to "বানারীপাড়ায় ঐহিত্যবাহী ২১৮তম সূর্যমনির মেলার অনুমতির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি"

Post a Comment