.

কাল আংশিক খুলছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফ্লাইওভার!


কাল শুক্রবার খুলে দেয়া হচ্ছে রাজধানীর গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ফ্লাইওভারের একটি অংশ। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় প্রায় ২১১ কোটি টাকা। আর গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ৮০-৯০ কোটি টাকা। হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফ্লাইওভার এটি
জানা গেছে, চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারের ছয়টি প্রবেশ সাতটি বেরোনোর পথসহ মোট ১৩টি ওঠানামার পথ (র্যাম্প) রয়েছে। তবে তিনটি র্যাম্পের কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। আর দুটি র্যাম্পের কাজ কিছুটা বাকি। আগামীকাল ফ্লাইওভারটির নিমতলী, কুতুবখালী অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ফ্লাইওভারটির গুলিস্তান, পলাশী, মতিঝিল শনির আখড়া পর্যন্ত পথ খুলে দেয়া হবে। সায়েদাবাদ যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের জনপথের অংশের কিছু কাজ বাকি আছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব কাজ শেষ করা হবে
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণে ৬৬৭ কোটি টাকায় কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু কয়েক দফা বৃদ্ধির পর প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে হাজার ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বিল্ড ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এর তত্ত্বাবধান করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক দশমিক কিলোমিটার দীর্ঘ কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। গত আগস্ট উদ্বোধন করা ফ্লাইওভারটির কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। আবার প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ ছয় লেনবিশিষ্ট বনানী ওভারপাস, ৫৬১ মিটার সংযোগ ব্রিজ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের মিরপুর-বিমানবন্দর সড়ক ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত ফ্লাইওভারের কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ১০৫ কোটি টাকা। আর রাজধানীতে চলমান দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে নির্মিত ফ্লাইওভারটির কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ৯৪ কোটি টাকা
প্রসঙ্গে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘কুড়িল ফ্লাইওভার বা মিরপুর-বিমানবন্দর সড়ক ফ্লাইওভারের চেয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার আকারে অনেক বড়। এক্ষেত্রে গড় ব্যয় দিয়ে সব বিষয় মূল্যায়ন করা যায় না। এটি একটি ভিন্নধর্মী প্রকল্প। তাই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
এদিকে চলতি বছরের ১৪ জুন মুম্বাইয়ে উদ্বোধন করা হয় ১৬ দশমিক কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্টার্ন ফ্রিওয়ে। এর নির্মাণ ব্যয় ১৯ কোটি ডলার বা হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। ভারতীয় কোম্পানি সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করে; যারা গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণে বাংলাদেশী ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে সহযোগিতা করছে
আবার কলকাতায় নির্মাণাধীন দশমিক ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পরমা-পার্ক সার্কাস ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৭ কোটি ২০ লাখ রুপি বা ৩৯২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার বাটানগরে কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে; যার কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ৪৪ কোটি টাকা
এদিকে গত ২৪ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় ১০ দশমিক কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচটি ফ্লাইওভার উদ্বোধন করা হয়। এগুলোর কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ৫৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। গত বছর উদ্বোধন করা চীনের প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচটি এলিভেটেড রোড নির্মাণেও কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় ৪৮ কোটি টাকা
শ্রমিকের গড় মজুরির হিসাবেও চীন, মালয়েশিয়া ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় কম হওয়ার কথা। ২০১২ সালের ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন কস্ট সার্ভের তথ্যমতে, মালয়েশিয়ায় নির্মাণ শ্রমিকদের গড় মজুরি প্রতি ঘণ্টায় ডলার, চীনে ভারতে ডলার। আর বাংলাদেশে তা ৫০ সেন্টেরও কম
নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক . মো. মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ৮০-৯০ কোটি টাকার মধ্যেই থাকে। মজুরি কম হওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যয় আরো কম। ঢাকা শহরে মাটির নিচে অপরিকল্পিতভাবে পরিষেবা সংযোগ লাইন ছড়িয়ে থাকায় এক্ষেত্রে ব্যয় কিছুটা বেশি হয়। তবে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় কোনোভাবেই ১০০ কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক হয়ে গেছে
উল্লেখ্য, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের টোল থেকে ২৪ বছরে মুনাফাসহ নির্মাণ ব্যয় তুলে নেবে ওরিয়ন। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের টোল টাকা, অটোরিকশা ১০, কার ৩৫, জিপ ৪০, মাইক্রোবাস ৫০, পিকআপ ৭৫, বাস ১০০, ট্রাক ১০০, ছয় চাকার ট্রাক ১৫০ টেইলার ২০০ টাকা। যেকোনো স্থান থেকে ফ্লাইওভারে উঠলেই ভাড়া প্রযোজ্য হবে

0 Response to "কাল আংশিক খুলছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফ্লাইওভার!"

Post a Comment