সুমন দাস (অভী) পটুয়াখালী ঃ পটুয়াখালীর সড়ক বিভাগের বেইলী ও স্টীল ব্রীজের অকেজো বিভিন্ন সামগ্রী গোপনে নিলাম দেখিয়ে ৬০টনের স্থলে ৩ শতাধিক টন মাল পাচার করার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করায় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক চাদাঁবাজী মামলা দায়ের করেছে সড়ক বিভাগ। আজ শুক্রবার দুপুরে নিজেদের নানান অনিয়ম ও দূর্ণীতি রোধ করতে ও সাংবাদিকদের লেখনিতে তথ্য ফাঁস হওয়ার আশংকায় সদর থানায় চাঁদাবাজি মামলা ও জিডি দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের। দপ্তরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের আওতায় জেলার লেবুখালী সড়কের শিয়ালী, তেলিখালী, মৌকরন ব্রীজ, বাউফল সড়কের বগা বাজার, চর গরবদী, পটুয়াখালী-কলাপাড়া-কুয়াকাটা ৭৬ কিঃমিঃ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানের গার্ডার ব্রীজ নির্মান করার ফলে পুরাতন স্টীলের বেইলী ব্রীজের সমুদয় সামগ্রী অপসারন করে দপ্তরের গোডউনে মজুদ করা হয়।
২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১নং নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয় পটুয়াখালী সড়ক দপ্তরের নিজস্ব ষ্টক ইয়ার্ড গোডাউনে ও বাউন্ডারী সীমানায় রক্ষিত ব্যবহার অনুপযোগী বেইলী ও স্টীল ব্রীজের বিভিন্ন সামগ্রী ও যন্ত্রাংশ। গত ১১মার্চ ওই দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ১০টি ভিন্ন গ্রুপে মোট ৬০টন অকোজে বিভিন্ন সামগ্রীর একটি তালিকা সম্বলিত কার্যাদেশ প্রদান করেন মেসার্স গাজী ট্রেডিংসহ তিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। অফিস আদেশ মোতাবেক মাত্র সাড়ে ৫লাখ টাকা জমা দেয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। নিলামের কার্যাদেশ অনুযায়ী ১০ গ্রুপে ষ্টীল সামগ্রী ও সড়ক বিভাগের উন্নয়ন মুলক কাজে ব্যবহৃত অচল রোলার, মিনি ট্রাক, ব্যবহার অনুপযোগী বিটুমিন ড্রাম, পরিত্যাক্ত ব্যাটারীসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহের উল্লেখ থাকে। পাশাপাশি নিলামকৃত অকেজো বিভিন্ন সামগ্রী ঠিকাদারদের কার্যাদেশ অনুযায়ী বুঝিয়ে দিতে দপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে (এসডি) প্রধান করে একজন সহকারী প্রকৌশলীসহ ৫জনের একটি কমিটি করে দেয় নির্বাহী প্রকৌশলী। কার্যাদেশ পেয়ে গত ১২মার্চ থেকে মালমাল বুঝিয়ে দেয়া কমিটির সদস্যদের যোগসাজোসে ৩ ঠিকাদার মরিচা ধরা ৬০টন মালের সাথে মজুদকৃত ব্যবহার উপযোগী ষ্টীল ব্রীজ ও লোহার ট্রানজাম, এঙ্গেঁল, ডেক প্লেট, ৪নং ভীম, র্যাকার, ক্রস, ৬ ব্রাসসহ বিভিন্ন মূল্যবান ৩ শতাধিক টন মালামাল দফায় দফায় নিয়ে যায়। যার অনুমানিক মূল্য কোটি টাকার উপরে। এ সংক্রান্ত সংবাদ গত ৩০ মার্চ থেকে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয় সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহল এবং সাধারন ঠিকাদারদের মাঝে।
নিলামের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। এর পরই নিলামের সাথে জড়িত অসাধু কর্মকর্তারা শুরুকরে দৌড়ঝাপ। আসল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নিজেদের অনিয়ন থেকে রক্ষা পেতে উঠে পড়ে লাগেন তারা। এ ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদের ফলোআপের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দূর্নীতিতে ডুবে থাকা সড়ক বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের বিষয়ে বেরিয়ে আসে দূর্নীতি অনিয়মের বিশাল ফিরিস্তি। গত অর্থ বছরে লাউকাঠী নদীর উপর পটুয়াখালী সেতুর টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেয়া হয় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকায়। একই মহাসড়কের লেবুখালী ফেরীর ইজারা দেয়া হয় ৮০ লাখ টাকায়। কিন্তু চলতি অর্থ বছরে টোল ও ফেরীর ইজারা না দিয়ে অফিসের আস্তাভাজন লোক বসিয়ে খাস আদায়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্তসহ কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের নির্মানাধিন শিয়ালী গার্ডার ব্রীজের ঢালাইয়ের সময় ঠিকাদারের প্রতিনিধির কাছে দু’লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে না পাওয়ায় শ্রমিকদের মারধর শুরু করলে পাল্টা হামলা চালিয়ে আহত করে এসডি, এসও এবং কার্য সহকারীসহ ৬ জনকে। ওই বিষয়ে মামলা দায়ের করলেও অজ্ঞাত কারনে নিক্রিয় হয়ে যায় বিষয়টি। প্রকৌশলীরা আহত ও ঘুষ দাবীর কারনে এ বিষয়েও খবর প্রকাশ হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বিভিন্নি পত্রিকায়। ওই ঘটনায়ও তখন তোলপাড় চলে বিভিন্ন মহলে। ওই থেকেই সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষিপ্ত থাকেন ওই অসাধু চক্রটি।
এ সব অনিয়নের সাথে জড়িত রয়েছেন দপ্তরের বেশীরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এই সব অনিয়ম দূর্ণীতি থেকে রেহাই পেতে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের তথ্য না দিয়ে উল্টো সায়েস্তা করার মিশনে নামেন ওই দপ্তরের জড়িত কর্তা-ব্যাক্তিরা। নির্বাহী প্রকৌশলীর মো. জহিরুল ইসলামের কাছে বিষয় গুলোর বার বার তথ্য চেয়েও না পেয়ে ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলামের দারস্ত হন সাংবাদিকরা। সওজ বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে কর্মকর্তাদের কিছু কিছু ভুল ত্রুটির কথা স্বীকার করে এলাকার উন্নয়নে স্বার্থে সাংবাদিকদের সহায়তা চেয়ে তিনিও তথ্য না দিয়েই কৌশলে ফিরিয়ে দেন সাংবাদিকদের। তথ্য চাওয়ার বিষয় বস্তুুর পরিনতি জড়িত কর্মকর্তারা আচ করতে পেরে তড়িঘড়ি করে গোপন বৈঠক করেন গভীর রাত পর্যন্ত।
নিজেদের এসব অনিয়ন দূর্নীতিতে পুকুর চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা হয় হয়রানি মূলক চাঁদাবাজীর সাঁজানো মামলা ও জিডি। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এই দুর্ণীতি অনিয়নের তথ্য সংগ্রহে করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলেও কথিত এ চাঁদাবাজী মামলায় আসামী করা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিন ও আঞ্চলিক দৈনিক মতবাদ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সঞ্জয় কুমার দাস লিটু ও পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক, মাছরাংঙ্গা টেলিভিশন ও বাংলাদেশ টুডে’র পটুয়াখালী প্রতিনিধি এবং আঞ্চলিক দৈনিক আজকের বরিশালের ব্যুরো প্রধান মো. জলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে। তবে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া অন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সদর থানায় সাধারন ডায়েরি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এ সকল দুর্ণীতিতে জড়িতদের অন্যতম কর্তা মামলার বাদী সহকারী প্রকৌশলী মো. মামুন হোসেন সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে লেখনি থামাতে বেছে নেয় মামলা দায়েরের অপ কৌশল।
0 Response to "পটুয়াখালী সওজ বিভাগের নিলামের নামে কোটি টাকার মাল পাচার অনিয়মের তথ্য চাইলে সাংবাদিকদের নামে মামলা ও ডায়েরী"
Post a Comment